মহান আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে সৃষ্টির সেরা হিসেবে পাঠিয়েছেন। মানুষের এই শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা বজায় রাখতে হলে প্রয়োজন সুন্দর আচার-আচরণ। মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্মের মাধ্যমে যেসব আচার- ব্যবহার, চালচলন এবং স্বভাবের প্রকাশ ঘটে সেসবের সমষ্টিই আখলাক। এটি শুধু মানুষের সাথেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং জীবজন্তু, পশুপাখি, গাছপালা ও পরিবেশের সাথেও সুন্দর আচরণ প্রয়োজন।
মানুষ সামাজিক জীব। পরিবার এবং সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করে। কখনো আখলাক (আচরণ) প্রশংসনীয় হয় আবার কখনো নিন্দনীয় হয়। প্রশংসনীয় আচরণকে আখলাকে হামিদাহ্ বা সচ্চরিত্র বলে। আর নিন্দনীয় আচরণকে আখলাকে যামিমাহ্ বলে।
আখলাকে হামিদাহ্ বা প্রশংসনীয় আচরণগুলো হলো সত্যবাদিতা, পিতামাতার প্রতি উত্তম ব্যবহার, শিক্ষকদের সম্মান করা, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, সহপাঠীদের সাথে সদাচরণ, বড়োদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ছোটোদের প্রতি স্নেহ ইত্যাদি।
আখলাকে যামিমাহ্ বা নিন্দনীয় আচরণগুলো হলো মিথ্যা কথা বলা, পরনিন্দা করা, আমানতের খিয়ানত করা, গালি দেওয়া, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা ইত্যাদি। প্রতিটি মানুষের আখলাকে হামিদাহ্ অর্জন ও আখলাকে যামিমাহ্ বর্জন করা উচিত। আমরা আখলাকে হামিদাহ্ অর্জন করব এবং আখলাকে যামিমাহ্ বর্জন করব।
এ অধ্যায় শেষে আমরা-
- আখলাকের ধারণা বর্ণনা করতে পারব।
 - সদাচরণের ধারণা ও কতিপয় সদাচরণের গুরুত্ব ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করতে পারব।
 - কতিপয় অসদাচরণের ধারণা, পরিণতি এবং এগুলো পরিহারের উপায় ব্যাখ্যা করতে পারব।
 - ধূমপান ও মাদকাসক্তির ধারণা ও কুফল বর্ণনা করতে পারব।
 - বাস্তব জীবনে সদাচরণে আগ্রহী হবো, অসদাচরণ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে উদ্বুদ্ধ হবো এবং নিকটতম ব্যক্তিদেরও বিরত থাকতে অনুপ্রাণিত করব।
 - ধূমপান ও মাদকাসক্তিজনিত সামাজিক ক্ষতি এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে আগ্রহী হবো।
 
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
ইয়াতিম রাকিব রাস্তাঘাটে সারাদিন হাঁটে। মাঝে মাঝে বিড়ি সিগারেট খায়। কিছুদিন পর সে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
রশিদ সাহেব পাঁচ বছর যাবৎ তার ছোট বোনের কোনো খোঁজ খবর রাখেন না। সামান্য কারণে তারা আজ একে অপরের শত্রু।
“তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি আমার নিকট সবচেয়ে বেশি প্রিয় যার চরিত্র উত্তম।"
আখলাকে হামিদাহ্ বা প্রশংসনীয় আচরণ মানুষের জীবনে খুবই প্রয়োজন। সুন্দর আচরণের মাধ্যমে মানুষে মানুষে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। সুসম্পর্ক ও সৌহার্দ ভাব বজায় থাকে। পারস্পরিক লেনদেন সহজতর হয়। জীবন হয়ে ওঠে মধুময়। তাই সচ্চরিত্রের গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবি (স.) বলেন, 'কিয়ামতের দিন দাঁড়িপাল্লায় সবচেয়ে ভারী জিনিস হবে মুমিনের উত্তম চরিত্র।' (তিরমিযি)
মহানবি (স.) আরও বলেছেন, 'তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় যার চরিত্র উত্তম।' (বুখারি ও মুসলিম)
মহান আল্লাহ মানুষকে অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন। এগুলোর মধ্যে সচ্চরিত্র একটি উত্তম নিয়ামত। সচ্চরিত্র শিক্ষার জন্য সর্বোত্তম আদর্শ হচ্ছেন আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স.)। পরিপূর্ণ সচ্চরিত্রের প্রতীক ছিলেন তিনি। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
অর্থ: "অবশ্যই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২১)
মহানবি (স.)-এর চরিত্রের মধ্যে সদাচরণের গুণগুলো পরিপূর্ণভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। এ সম্পর্কে রাসুল (স.) ঘোষণা করেন-
إِنَّمَا بُعِثْتُ لِا تَمِّمَ مَكَارِمَ الْأَخْلَاقِ
অর্থ: 'আমি উত্তম চারিত্রিক গুণাবলি পরিপূর্ণ করার উদ্দেশ্যেই প্রেরিত হয়েছি।' (মুসনাদে আহমাদ)
আমাদের জন্য মহানবি (স.)-এর সমগ্র জীবনই উত্তম অনুকরণীয় আদর্শ। আমরা মহানবি (স.)-এর জীবন অনুসরণ করে নিজেদের জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলব।
| কাজ: শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে ভালো অভ্যাস ও মন্দ অভ্যাসের তালিকা বা চার্ট তৈরি করে শিক্ষককে দেখাবে। | 
সত্যবাদিতার আরবি প্রতিশব্দ হলো সিদক (صِدْقٌ)। এর অর্থ হলো সততা, সত্যবাদিতা, সত্য কথা বলা, সত্য সাক্ষ্য দেওয়া ইত্যাদি। বাস্তব বা প্রকৃত ঘটনা যথাযথ প্রকাশ করাকে সত্যবাদিতা বলে। যে ব্যক্তির মধ্যে এ মহৎগুণ আছে তাকে বলে সাদিক (صَادِقٌ)বা সত্যবাদী। যে সত্য কথা বলে তাকে সবাই ভালোবাসে ও সম্মান করে। সত্যবাদী দুনিয়াতে যেমন সম্মানের অধিকারী হন তেমনিভাবে আখিরাতেও পরম সুখ লাভ করবেন। আমাদের প্রিয় নবি (স.) বাল্যকাল থেকে সকলের নিকট সত্যবাদী এবং বিশ্বাসী বলে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তাই সবাই তাঁকে আল-আমিন বলে ডাকত এবং সম্মান করত। তিনি জীবনে মিথ্যা কথা বলেননি। প্রাণের শত্রুও তাঁকে মিথ্যাবাদী বলতে পারেনি। যে সত্য কথা বলে না তাকে কেউ বিশ্বাস করে না। মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) সত্যবাদিতা সম্পর্কে বলেন-
فَإِنَّ الصَّدْقَ طَمَا نِينَةٌ وَإِنَّ الْكَذِبَ رِيبَةٌ
অর্থ: 'সত্য হলো প্রশান্তি এবং মিথ্যা হলো সংশয়।' (তিরমিযি)
সত্যবাদিতার উপকারিতা সম্পর্কে নবি করিম (স.) আরও বলেন, 'তোমাদের অবশ্যই সত্যবাদী হওয়া উচিত। কেননা সত্যবাদিতা মানুষকে পুণ্যের পথে পরিচালিত করে, আর পুণ্য বেহেশতের পথে পরিচালিত করে।' পবিত্র কুরআনুল করিমে সত্যবাদীকে জান্নাত (বেহেশত) দানের কথা বলা হয়েছে-
هَذَا يَوْمُ يَنْفَعُ الصَّدِقِيْنَ صِدْقُهُمْ لَهُمْ جَنَّتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهُرُ خَلِدِينَ فِيهَا أَبَدًا طَ
অর্থ: "এই তো সেদিন-যেদিন সত্যবাদীগণ তাদের সততার জন্য উপকৃত হবে। তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে।” (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ১১৯)
আমাদের বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (র.)-এর জীবনে সত্যবাদিতা সম্পর্কে একটি বাস্তব উদাহরণ পাওয়া যায়। তখন তিনি অল্পবয়স্ক বালক। শিক্ষা গ্রহণের জন্য তিনি বাগদাদ রওনা হলেন। গমনের সময় মা তাঁকে সর্বদা সত্য কথা বলার আদেশ করেন। পথিমধ্যে একদল ডাকাত তাদের কাফেলার উপর হামলা করে। ডাকাত দল একে একে কাফেলার সকলকে তল্লাশি চালায়। তল্লাশির সময় বালক আব্দুল কাদিরকে জিজ্ঞাসা করল যে হে বালক, 'তোমার কাছে কিছু আছে কি?' তিনি নির্ভয়ে উত্তর দিলেন, 'চল্লিশটি স্বর্ণমুদ্রা আছে।' তাঁর কথা যাচাইয়ের জন্য ডাকাত সর্দার ধমক দিয়ে বলল, 'কোথায় স্বর্ণমুদ্রা? আমাদের তা দেখাও।' তিনি তার জামার আস্তিনে সেলাই করা অবস্থায় ডাকাতদের তা বের করে দেখালেন। ডাকাতরা তাঁর সততা দেখে অবাক হয়ে বলল, 'এরূপ লুকানো স্বর্ণমুদ্রা আমরা খুঁজে পেতাম না, তুমি কেন বললে?' তিনি বললেন, 'আপনারা জিজ্ঞাসা করায় আমি সত্য কথা বলে দিয়েছি। কারণ আমার মা আমাকে সর্বদা সত্য কথা বলতে বলেছেন।'
ডাকাতরা বালক আব্দুল কাদিরের সততায় মুগ্ধ হয়ে নিজেদের পাপকর্ম সম্পর্কে অনুশোচনা করল। তারা ডাকাতি ছেড়ে দিয়ে সৎ পথে চলার প্রতিজ্ঞা করল। সত্যবাদিতা এভাবেই মানুষকে মুক্তি ও কল্যাণের পথ দেখায়।
আমাদের প্রতিজ্ঞা: সদা সত্য কথা বলব। [শিক্ষক শিক্ষার্থীদের এরূপ আরও ছোটো ঘটনা বলে শুনাবে এবং তাদের এরূপ আরও ছোটো ছোটো ঘটনা বলার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে।।
| কাজ : যদি বালক আব্দুল কাদির সত্য গোপন করত তাহলে কী ক্ষতি হতে পারত। শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে খাতায় লিখে দেখাবে। | 
সুন্দর পৃথিবীতে পিতামাতা আমাদের সবচেয়ে আপনজন। আমাদের জীবনে তাঁদের অবদান সবচেয়ে বেশি। জন্মের সময় আমরা ছিলাম অসহায়। আমরা নিজেদের প্রয়োজনের কথাও বলতে পারতাম না। পিতামাতা বুক ভরা স্নেহ-মমতা দিয়ে লালনপালন করে আমাদের বড়ো করে তোলেন। অসুখে-বিসুখে দিনরাত কষ্ট করে সেবাযত্ন করেন। সুশিক্ষার ব্যবস্থা করেন। পিতামাতা আমাদের জন্য আল্লাহর সেরা দান। তাঁরা সর্বদা আমাদের কল্যাণ কামনা করেন। পিতামাতার চেয়ে আপনজন পৃথিবীতে আর কেউ নেই। সুতরাং এরূপ কল্যাণকামী পিতামাতার প্রতি আমাদেরও কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে।
কর্তব্য
পিতামাতার আদেশ-নিষেধ পালন সন্তানের জন্য ওয়াজিব (কর্তব্য)। সেই সাথে পিতামাতার সেবা- যত্ন করাও আমাদের কর্তব্য। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন-
وَقَضَى رَبُّكَ إِلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا
অর্থ: "তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে।" (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৩)
পিতামাতা বৃদ্ধ হলে সন্তান তাঁদেরকে অধিকতর সেবাযত্ন করবে। তাঁদেরকে ধমক দেবে না বা মনে কষ্ট পায় এরূপ কোনো কথা বা কাজ করবে না। তাঁদের সাথে উত্তম ও সম্মানজনক ভাষায় কথা বলবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلْهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَا أَفٍ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا
অর্থ: "যদি পিতামাতার একজন অথবা উভয়ে তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাঁদের প্রতি তুমি বিরক্তিসূচক শব্দ 'উহ' উচ্চারণ করো না এবং তাঁদেরকে ধমক দিও না। তাঁদের সাথে সম্মানজনক ভাষায় কথা বলো।" (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৩)
তাঁদের উদ্দেশ্যে সর্বদা আল্লাহর নিকট আমাদের এই দোয়া করা উচিত-
رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيْنِي صَغِيرًا
অর্থ: "হে আমার প্রতিপালক, তুমি আমার পিতামাতার প্রতি তেমনি সদয় হও! যেমনিভাবে তাঁরা আমাকে শৈশবে (আদরযত্নে) লালনপালন করেছেন।" (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৪)
পিতামাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করা সন্তানের উপর কর্তব্য। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন-
قُلْ مَا انْفَقْتُمْ مِنْ خَيْرٍ فَلِلْوَ الدِّيْنِ وَ الْأَقْرَبِينَ
অর্থ: "বলুন, যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় করবে, তা পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য।" (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২১৫)
পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা আমাদের কর্তব্য।
এ সম্পর্কে মহানবি (স.)-এর বাণী:
الْجَنَّةُ تَحْتَ أَقْدَمِ الْأُمَّهَاتِ
অর্থ: 'মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত।' (আত-তারগিব)
মহানবি (স.) আরও বলেছেন, 'পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি, পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।' (তিরমিযি)
পিতামাতার প্রতি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করলে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করা যায়।
পিতামাতা আমাদের জন্য আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। আমরা তাঁদের সাথে সদ্ব্যবহার করব। তাঁদের অবাধ্য হবো না। তাঁদের জন্য দোয়া করব।
| কাজ: শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে পিতামাতার প্রতি কী কী কর্তব্য রয়েছে তার একটি তালিকা তৈরি করবে। | 
আত্মীয় শব্দটি এসেছে আত্মা থেকে। আত্মার সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিকে আত্মীয় বলে। যাদের সাথে জীবনের ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে তাদের আমরা আত্মীয় বলি। ইসলামের দৃষ্টিতে পিতামাতা ও সন্তানের পর অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে যারা অগ্রগণ্য তারাই আত্মীয়। যেমন: ভাই-বোন, দাদা-দাদি, নানা-নানি, চাচা-চাচি, মামা-মামি, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি এবং অন্যান্য ঘনিষ্ঠ আপনজন।
ইসলামি সমাজে পিতামাতার ন্যায় আত্মীয়স্বজনের প্রতিও আমাদের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। আত্মীয়দের মধ্যে যারা বড়ো তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখানো এবং যারা ছোটো তাদের অবশ্যই আদর ও স্নেহ করতে হবে। আত্মীয়দের সাথে উত্তম ব্যবহার করতে হবে। আত্মীয়দের মধ্যে গরিব-ধনী নির্বিশেষে সকলের সাথে সৌজন্যমূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। গরিব ও অভাবগ্রস্ত আত্মীয়দের প্রয়োজনীয় সাহায্য করতে হবে। এ সম্পর্কে আল্লাহর বাণী:
وَأَتَى الْمَالَ عَلَى حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبى
অর্থ: "আল্লাহর ভালোবাসা লাভের জন্য নিকট আত্মীয়দের দান করে।" (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৭৭)
আত্মীয়রা রোগাক্রান্ত হলে তাদের সেবাযত্ন করতে হবে। বিপদে-আপদে খোঁজখবর নিতে হবে। আত্মীয়দের সাথে সদ্ব্যবহার করার জন্য স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন-
وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبي
অর্থ: "পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে এবং নিকট আত্মীয়দের সাথেও উত্তম আচরণ প্রদর্শন করবে।" (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৬)
তিনি আরও বলেন-
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ وَابْتَائِ ذِي الْقُرْبي
অর্থ: "নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ ন্যায়বিচার কায়েম করতে, পরস্পরের প্রতি ইহসান বা উপকার করতে ও আত্মীয়স্বজনের অধিকার আদায় করতে নির্দেশ দিচ্ছেন।" (সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৯০)
আত্মীয়দের কোনোরূপ কষ্ট দেওয়া যাবে না। আত্মীয়দের সাথে কোনোরূপ সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না। এ মর্মে রাসুল (স.) বলেছেন-
لا تَنْزِلُ الرَّحْمَةُ عَلَى قَوْمٍ فِيهِمْ قَاطِعَ رِحْم
অর্থ: 'যে সম্প্রদায়ের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী লোক থাকে সে সম্প্রদায়ের প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয় না।' (বায়হাকি)
কোনো অন্যায় বা অসৎ কাজে আত্মীয়কে সাহায্য করা যাবে না। বরং অন্যায় কাজ থেকে তাকে বিরত রাখাই দায়িত্ব। আত্মীয়দের সাথে ভালোবাসাপূর্ণ আচরণ করলে পৃথিবীতে লাভবান হওয়া যায়। নবি কারিম (স.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি কামনা করে যে তার জীবিকা ও আয়ু বৃদ্ধি পাক, সে যেন আত্মীয়দের সাথে সুন্দর আচরণ করে।' (বুখারি ও মুসলিম)
আত্মীয়স্বজনের সাথে আমরা সকলে ভালো ব্যবহার করব। তাদের প্রাপ্য আদায় করব। তাদের দুঃখ- কষ্টে সাহায্য সহযোগিতা করব। তাদের সকল বৈধ কাজে সহযোগিতা করব।
| কাজ: শিক্ষার্থীরা আত্মীয়দের সাথে কীভাবে সদাচরণ করা যায় তার একটি তালিকা তৈরি করবে। | 
মানুষ সামাজিক জীব। আমরা সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করি। আমাদের আশপাশে আরও অনেক লোক বসবাস করে। আমাদের চারপাশে আরও যারা বসবাস করে তারা সকলেই আমাদের প্রতিবেশী। আমাদের নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন, 'সামনে পিছনে ডানে বামে চল্লিশ ঘর পর্যন্ত প্রতিবেশী।'
স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে পাশাপাশি অবস্থানকারী কিংবা সাময়িকভাবে আশপাশে অবস্থানকারীকে প্রতিবেশী বলা হয়। এমনকি চলার পথের সহযাত্রীদেরও প্রতিবেশী বলা যায়।
কর্তব্য
আমরা মুসলমান। আমাদের চারপাশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান যারা বসবাস করে তারা সবাই আমাদের প্রতিবেশী। প্রতিবেশীদের সাথে সদ্ব্যবহার ও সুন্দর আচরণ করা আমাদের কর্তব্য। এ প্রসঙ্গে রাসুল (স.)-এর বাণী:
خَيْرُ الْخَيْرَانِ عِنْدَ اللَّهِ خَيْرُهُمْ لِجَارِهِ
অর্থ: 'আল্লাহর নিকট সেই প্রতিবেশী সর্বাপেক্ষা উত্তম, যে তার প্রতিবেশীর নিকট উত্তম।' (তিরমিযি)
প্রতিবেশীকে বিপদে-আপদে সাহায্য সহযোগিতা করতে হবে। মহানবি (স.) এ সম্পর্কে আরও বলেন, 'সেই ব্যক্তি আমার উপর প্রকৃত ইমান আনেনি যে আরামে রাত কাটায় অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত।' (দারিমি)
অসুখে-বিসুখে প্রতিবেশীর খোঁজখবর নেওয়া প্রয়োজন। প্রতিবেশীর দোষ-ত্রুটি খুঁজে বের করা উচিত নয়, তাদের মঙ্গল কামনা করা, কোনো প্রকার কষ্ট না দেওয়া এবং অন্যায়-অত্যাচার না করা আমাদের মানবিক ও নৈতিক দায়িত্ব। এ বিষয়ে রাসুল (স.) বলেন-
لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لَّا يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ
অর্থ: 'সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার প্রতিবেশী তার অত্যাচার ও অন্যায় আচরণ থেকে নিরাপদ নয়।' (মুসলিম)
প্রতিবেশীদের একজনের হক অন্যজনের কাছে আমানতস্বরূপ। এ আমানতকে অবশ্যই হেফাজত করতে হবে। প্রতিবেশী যে কেউ কিংবা যেমনই হোক, জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও শ্রেণি নির্বিশেষে সকলকে সমান মর্যাদা দিতে হবে।
প্রতিবেশীকে প্রথমে সালাম দেওয়া এবং খানা-পিনায় শরিক করা প্রতিবেশীর কর্তব্যের শামিল। তাদের মাঝে উপহার উপঢৌকন বিনিময় করাও প্রতিবেশীর কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। প্রতিবেশীকে কোনোরূপ ঘৃণা করা যাবে না এবং হীন ও নগণ্য মনে করা যাবে না। প্রতিবেশীর অধিকার সম্পর্কে মহানবি (স.) বলেন,
'প্রতিবেশীর হক হলো, সে যদি রোগাক্রান্ত হয় তাহলে তুমি তার সেবা করবে। সে মরে গেলে তার লাশের সঙ্গে কবরস্থান পর্যন্ত যাবে, কাফন দাফনে অংশগ্রহণ করবে। সে যদি অর্থ অভাবে পড়ে, তাহলে তুমি তাকে ঋণ দেবে, সে যদি পরনের জন্য কাপড় সংগ্রহ করতে না পারে, তাহলে তুমি তাকে কাপড় সংগ্রহ করে দেবে। আর যদি কোনো কল্যাণ হয় তুমি তাকে মুবারকবাদ জানাবে। সে যদি কোনো বিপদে পতিত হয় তবে তুমি তার দুঃখের ভাগ নেবে, সহানুভূতি জানাবে। তোমার ঘর তার ঘর থেকে উঁচু বানিয়ে তাকে মুক্ত বায়ু থেকে বঞ্চিত করবে না। তোমার রান্নার পাত্রের বাতাস দিয়েও তাকে কষ্ট দেবে না। যদি তেমন অবস্থা হয়ই তাহলে তাকে এক চামচ খাবার পাঠিয়ে দেবে।' (তাবারানি)
প্রতিবেশী অভাবগ্রস্ত, দরিদ্র বা শ্রমজীবী হলেও তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে। তাদের পেশাকে সম্মান করতে হবে। সুখে-দুঃখে পাশে থাকতে হবে, সম্মানের সাথে তাদের সম্বোধন করতে হবে।
আমরা প্রতিবেশীর সাথে মিলেমিশে থাকব। সুখে-দুঃখে বিপদে-আপদে তাদের পাশে দাঁড়াব। তাদের সাথে ঝগড়া বিবাদ করব না।
| কাজ : শিক্ষার্থীরা প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার সুফল সম্পর্কে দলীয়ভাবে পাঁচটি করে বাক্য লিখে শিক্ষককে দেখাবে। | 
মানব চরিত্রের একটি প্রশংসনীয় আচরণ হলো বড়োদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ছোটোদের প্রতি স্নেহ প্রদর্শন করা। একজন আদর্শ মানুষ বড়োদের শ্রদ্ধা ও ছোটোদের স্নেহ করেন। প্রিয় নবি (স.) বড়োদের সম্মান করতেন এবং ছোটোদের আদর করতেন। তিনি সর্বদা ছোটোদের আবদার রক্ষা করার চেষ্টা করতেন।
বড়োদের শ্রদ্ধা ও ছোটোদের স্নেহ করার গুরুত্ব অপরিসীম। এর মাধ্যমে ছোটোরা বড়োদের শ্রদ্ধা ও সম্মান করতে শিখে এবং বড়রা ছোটদের স্নেহ করেন ও ভালোবাসেন। ফলে সমাজে এক মধুর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।  মহানবি (স.) বলেন-
لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَّمْ يَرْحَمْ صَغِيرَنَا وَلَمْ يُوَقِّرُ كَبِيرَنَا
অর্থ: 'সে ব্যক্তি আমার উম্মতের মধ্যে গণ্য নয় যে ব্যক্তি ছোটোদের স্নেহ করে না এবং বড়োদের শ্রদ্ধা-সম্মান করে না।' (তিরমিযি)
বড়োদের সালাম প্রদান করা, তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, সৌজন্য বজায় রেখে কথাবার্তা বলা, প্রয়োজনে বড়োদের কাজকর্মে সাহায্য সহযোগিতা করা, তাদের আদেশ উপদেশ মেনে চলা এবং বসা থাকলে উঠে তাদের বসার ব্যবস্থা করা ছোটোদেরও মানবিক কর্তব্য।
বড়োদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে পরকালে বিশেষ সাওয়াব অর্জিত হবে এবং জান্নাত লাভ সহজ হবে। ছোটোদের আদর সোহাগ করা, তাদের ভালো কাজে উৎসাহ প্রদান করা বড়দের কর্তব্য। এতে ছোটোদের মনের প্রসারতা বৃদ্ধি পায়।
প্রিয় নবি (স.) বলেছেন-
'কোনো বৃদ্ধকে যদি কোনো যুবক বার্ধক্যের কারণে শ্রদ্ধা করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা ঐ যুবকের জন্য বৃদ্ধ অবস্থায় এমন ব্যক্তিকে নিযুক্ত করবেন যে তাকে শ্রদ্ধা করবে।' (তিরমিযি)
| কাজ : শিক্ষার্থীরা চার-পাঁচজন করে দলে বিভক্ত হয়ে বড়োদের প্রতি ছোটোদের করণীয়গুলো পোস্টার পেপারে লিখে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে। | 
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের বিভিন্ন লোকের সাথে মিলেমিশে কাজকর্ম করতে হয়। আমরা যে স্কুল বা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি, সেখানে আমাদের সাথে আরও অনেকে পড়াশোনা করে। বিদ্যালয়ে আমরা যাদের সাথে একই শ্রেণিতে লেখাপড়া করি তারা সকলেই আমাদের সহপাঠী। সহপাঠীদের সাথে আমাদের আন্তরিক ও মধুর সম্পর্ক রয়েছে। সহপাঠীরা আমাদের ভাইবোনের মতো। স্কুলে আমরা একে অপরের সুবিধা-অসুবিধার প্রতি লক্ষ রাখি। স্কুলে আমাদের সহপাঠীদের কেউ অসুস্থ হলে সেবা করা আমাদের কর্তব্য। প্রয়োজনে ডাক্তারের নিকট নিয়ে যেতে সাহায্য করতে হবে। প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী, যেমন: বই, খাতা, কলম, পেনসিল কারো না থাকলে তাকে দিয়ে সাহায্য করা উচিত। আমাদের সহপাঠীদের মধ্যে কারো মন খারাপ হলে, বিষণ্ণ বা চিন্তিত হলে তার বিষণ্ণতার ভাব দূর করার চেষ্টা করতে হবে। সহপাঠীদের সাথে উত্তম আচরণ করা উচিত। তাদেরকে উত্তম শব্দে সম্বোধন করতে হবে।
কাউকে খাটো করে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে, একে অপরকে মর্যাদা দিতে হবে। সহপাঠীদের সাথে কটুবাক্য ব্যবহার করা উচিত নয়। কারো মনে কষ্ট পেতে পারে এমন কোনো আচরণ থেকে বিরত থাকব। কেউ কোনো বিপদে পতিত হলে বিপদ দূর করার চেষ্টা করব। কারো ব্যথায় সান্ত্বনা দেবো। কাউকে উপনামে ডাকব না। কারো পিছনে লাগব না। দোষ-ত্রুটি ধরে লজ্জা দেবো না।
সহপাঠীদের সুখে আমরা সুখী হই আবার কারো কোনো দুঃসংবাদ শুনলে আমরা ব্যথিত হই। ধৈর্য- ধারণের পরামর্শ প্রদান করি। কখনো কোনো সুখবর পেলে আমরা তার আনন্দে শরিক হই।
সহপাঠীদের সাথে সদ্ব্যবহার করলে বা সম্পর্ক থাকলে শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ ভালো থাকে, বিদ্যালয়ের পরিবেশ সুন্দর হয়। সুশিক্ষার জন্য এটা খুব প্রয়োজন।
| কাজ: শিক্ষার্থীরা ছোটো ছোটো দলে ভাগ হয়ে সহপাঠীদের প্রতি কর্তব্যের একটি তালিকা তৈরি করবে। | 
আখলাকে যামিমাহ্ অর্থ হলো অসদাচার বা নিন্দনীয় আচরণ। এমন কতগুলো নৈতিক অবক্ষয়মূলক আচরণ যা মানুষকে হীন, নীচ, ইতর শ্রেণিভুক্ত ও নিন্দনীয় করে। মিথ্যাচার, গিবত, পরনিন্দা, গালি দেওয়া ইত্যাদি আখলাকে যামিমাহ্ বা নিন্দনীর আচরণ। এগুলো বর্জন করতে হবে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এ ধরনের আচরণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহর বাণী:
وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقِّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ
অর্থ: “তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশ্রিত করো না এবং তোমরা জেনে-শুনে সত্য গোপন করো না।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৪২)
এ প্রসঙ্গে মহানবি (স.) বলেছেন, 'কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে ঐ ব্যক্তির সম্মান সবচেয়ে নিকৃষ্ট হবে যার অনিষ্টের ভয়ে লোকেরা তাকে পরিত্যাগ করে।' (বুখারি ও মুসলিম)
আমাদের প্রিয় নবি যাবতীয় নিন্দনীয় আচরণ থেকে পবিত্র ছিলেন, তিনি কখনো মিথ্যা কথা বলেননি। কাউকে তিনি কখনো গালি দেননি। ওয়াদা ভঙ্গ করেননি, কারো সাথে প্রতারণা করেননি।
আমরা রাসুল (স.)-এর এ সকল আদর্শ অনুসরণ করব।
আমাদের প্রতিজ্ঞা-
- আমরা কখনো মিথ্যা কথা বলব না।
 - ওয়াদা ভঙ্গ করব না।
 - প্রতারণা করব না।
 - কারো গিবত করব না।
 
মিথ্যা সকল পাপ কাজের জননী। প্রকৃত অবস্থা বা ঘটনাকে বিকৃত করে পরিবেশন করাকে মিথ্যাচার বলে। যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলে বা প্রকৃত ঘটনার বিকৃতি ঘটায় তাকে মিথ্যাবাদী বলে।
মিথ্যা একটি জঘন্যতম অপরাধ। এটি সকল পাপ কাজের মূল। মিথ্যা থেকে পাপ কাজের সূচনা হয়। প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, অন্যের মাল অপহরণ এ সকল অনৈতিক ও সমাজবিরোধী কর্মের মূলে রয়েছে মিথ্যাচার। যে সমাজে মিথ্যাচার বৃদ্ধি পায় সে সমাজ ক্রমে ক্রমে ধ্বংসের দিকে অগ্রসর হয়।
মিথ্যাচার একটি নিন্দনীয় আচরণ। মিথ্যাবাদীকে কেউ ভালোবাসে না। কেউ বিশ্বাস করে না। বিপদের সময় তাকে কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসে না। সকলে তাকে ঘৃণা করে। তার কথাকে কেউ গুরুত্ব দেয় না। পরিণামে দুনিয়াতে তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। মহান আল্লাহ তায়ালা তার উপর খুব অসন্তুষ্ট হন। আর তাই পরকালে তার স্থান হবে জাহান্নাম।
মহানবি (স.) এ বিষয়ে বলেন-
إِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِى إِلَى الْفُجُورِ وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ
অর্থ: 'আর তোমরা অবশ্যই মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকবে। কেননা মিথ্যা পাপ কাজের দিকে ধাবিত করে। আর পাপ কাজ জাহান্নামের পথে ধাবিত করে।' (মুসলিম)
মিথ্যা বর্জন করা কর্তব্য। মিথ্যা পরিত্যাগ করলে সকল পাপ থেকে বাঁচা যায়। মিথ্যাবাদীর কাছ থেকে রহমতের ফেরেশতারাও দূরে সরে যান। মহানবি (স.) বলেছেন, 'বান্দা যখন মিথ্যা কথা বলে, ফেরেশতারা তখন এর দুর্গন্ধের কারণে তার থেকে দূরে চলে যান।' (তিরমিযি)
আমাদের প্রিয় নবি (স.) কখনো মিথ্যা কথা বলতেন না। তিনি স্বার্থের পরিপন্থী হলেও কখনো মিথ্যা বা প্রতারণার আশ্রয় নিতেন না।
| কাজ: শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে সত্যের উপকারিতা এবং মিথ্যার অপকারিতার উপর একটি পোস্টার লিখে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করবে। | 
গিবত একটি সামাজিক অনাচার। কারো অগোচরে তার দোষ-ত্রুটি অন্যের কাছে প্রকাশকে গিবত বলে। একে পরনিন্দাও বলা যায়। গিবত একটি ঘৃণিত ও জঘন্য কাজ। এটি কবিরা গুনাহ। এ থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। রাসুল (স.) বলেন, 'গিবত কী তা কি তোমরা জানো?' লোকেরা উত্তরে বলল, 'আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন।' রাসুল (স.) বললেন, 'গিবত হলো তোমার ভাইয়ের সম্পর্কে তোমার এমন কথা বলা যা সে অপছন্দ করে।' জিজ্ঞাসা করা হলো, আমি যা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, এটাও কি গিবত হবে? রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, 'তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলেই গিবত হবে। আর তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তবে তা হবে 'বুহতান' বা অপবাদ।' (মুসলিম)
গিবত একটি নিন্দনীয় কাজ। গিবতের মাধ্যমে মানুষে মানুষে ঘৃণা ও শত্রুতা সৃষ্টি হয়। এর মাধ্যমে সমাজ জীবনে ঝগড়াফ্যাসাদসহ নানা অশান্তি সৃষ্টি হয়।
পবিত্র কুরআনুল করিমে গিবত করাকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে।
আল্লাহর বাণী:
"তোমরা একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে, নিশ্চয়ই তা তোমরা অপছন্দ করবে।" (সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১২)
গিবত করার মতো গিবত শোনাও পাপের কাজ। কেউ গিবত করলে তাকে গিবত থেকে বিরত রাখা কর্তব্য। তাহলে গিবতচর্চা সমাজ থেকে ক্রমে ক্রমে হ্রাস পাবে বা দূরীভূত হবে।
সর্বাবস্থায়ই গিবত বা পরনিন্দা থেকে মুক্ত হতে হবে। কারণ কোনো অবস্থায়ই গিবত জায়েজ বা বৈধ নয়। কেউ যদি গিবত করে তবে তার ক্ষতিপুরণ দিতে হবে। যার গিবত করা হয়েছে তার থেকে অবশ্যই মাফ চেয়ে নিতে হবে। আর যদি সে মারা যায়, তার থেকে ক্ষমা চাওয়া সম্ভব না হয়, তবে আল্লাহর নিকট তার গুনাহ মাফের দোয়া করতে হবে। রাসুল (স.) বলেন, 'নিঃসন্দেহে গিবতের একটি ক্ষতিপুরণ হলো, তুমি যার গিবত বা কুৎসা রটনা করেছ তার জন্য এভাবে দোয়া করবে: হে আল্লাহ! তুমি আমার ও তার গুনাহ মাফ করে দাও।'
এক মুসলমানের সম্পদ, জীবন ও সম্মান অপর মুসলমানের কাছে পবিত্র আমানত। গিবত অপর মুসলমান ভাইয়ের সম্মান নষ্ট করে বিধায় এটি ইসলামে হারাম।
গিবত ব্যভিচার থেকেও অধিকতর অপরাধ। রাসুল (স.) বলেছেন, 'গিবত বা পরনিন্দা ব্যভিচার অপেক্ষাও গুরুতর অপরাধ।' (আল-মুজামুল আওসাত)
| কাজ: শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে কী কী কাজ গিবত বা পরনিন্দার মধ্যে পড়ে, তার একটি চার্ট তৈরি করে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে। | 
কাউকে মন্দ নামে ডাকা, মন্দ কথা বলা, তিরস্কার করা, অশালীন বা অশ্লীল কথা বলা হলো গালি দেওয়া। কারো সম্পর্কে এরূপ বাক্য ব্যবহার করা যাতে তার হীনতা ও ঘৃণা প্রকাশ পায় তাও গালিস্বরূপ। কাউকে গালি দেওয়া বা মন্দ নামে ডাকা নিন্দনীয় কাজ। পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, "ইমানের পর মন্দ নামে ডাকা গর্হিত কাজ।" (সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১১)
মানুষ সভ্যজাতি, তারা কাউকে গালি দেবে না। সমাজে একত্রে বসবাস করতে হলে পরস্পরের সাথে মতের অমিল থাকতে পারে। একে অপরের সাথে ভুল বোঝাবুঝিও হতে পারে। একের সাথে অন্যের কথা কাটাকাটি হতে পারে। কিন্তু তাতে একে অন্যকে অশালীন বা অশ্লীল কথা বলে গালি দেওয়া উচিত নয়। অশালীন কথা বলা নিতান্তই খারাপ কাজ। যে গালি দেয়, অশালীন কথা বলে, সে সমাজে ঘৃণিত। তাকে মানুষ পছন্দ করে না। সমাজে তার কোনো সমাদর থাকে না। তার সাথে কেউ বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন করে না। আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) গালি দিতে বা গালিগালাজ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন-
سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ
অর্থ: 'মুসলমানদের গালি দেওয়া পাপ এবং হত্যা করা কুফ্রি।' (বুখারি ও মুসলিম) কেউ যদি গালি দেয় তবে তার উত্তরে গালি দেওয়া উচিত নয়।
একবার মহানবির কাছে এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করলেন, 'হে আল্লাহর রাসুল আমাকে আমার সম্প্রদায়ের এমন এক ব্যক্তি গালি দেয় যে আমার থেকে নীচু। এর প্রতিশোধ নিতে আমার কোনো বাধা আছে কি?' রাসুল (স.) তাকে বললেন, 'পরস্পর গালমন্দকারী উভয়েই শয়তান। তারা পরস্পরকে মিথ্যাবাদী বলে এবং একে অপরের দোষারোপ করে।' (বুখারি ও মুসলিম)
গালি সম্পর্কে আরও বলেছেন, পিতামাতাকে গালি দেওয়া মহাপাপ। সাহাবিগণ বললেন, 'হে আল্লাহর রাসুল এমন কোনো নরাধম আছে যে আপন পিতামাতাকে গালি দেয়?' তিনি বললেন, 'যে অপরের পিতামাতাকে গালি দেয় এবং অপরও তার পিতামাতাকে গালি দেয়।' (বুখারি ও মুসলিম)
হাদিস থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, অন্যের পিতামাতাকে গালি দেওয়া মানে নিজের পিতামাতাকে গালি দেওয়া। সমাজ গালিমুক্ত করতে গালির উত্তরে গালি দেবো না, এতে গালমন্দকারী লজ্জিত ও অনুতপ্ত হবে। গালমন্দ ভালো কাজ নয়, গালমন্দের ন্যায় অশালীন কাজ হতে আমরা বিরত থাকব।
| কাজ: শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে গালির ক্ষতিকারক বা কুফলগুলোর একটি তালিকা তৈরি করবে। | 
এই অপরূপ সুন্দর পৃথিবীতে মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টির সেরা হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের কল্যাণের জন্য পৃথিবীর যাবতীয় বস্তু সৃষ্টি করেছেন। তবে এর মধ্যে কিছু কিছু বস্তু মানুষের খাদ্য হিসেবে বৈধ বা হালাল করেছেন। আর যা মানুষের খাদ্য হিসেবে কল্যাণকর নয় তা অবৈধ ও হারাম করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী, "তোমরা উত্তম ও পবিত্র জিনিস খাও, তোমাদেরকে যা আমি রিজিক হিসেবে দান করেছি।" (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৭২)
খাদ্য গ্রহণে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও মানুষ অসৎ সঙ্গ ও কুপ্ররোচনায় নানা ধরনের ক্ষতিকর, হারাম বা নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হয়। এতে তার নিজের, পরিবারের ও সমাজের বিরাট ক্ষতি হয়।
মাদকাসক্তি ও ধূমপান মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো নেশাজাতীয় দ্রব্য। তাই এগুলো নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে রাসুল (স.) বলেছেন-
كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ خَمْرٍ حَرَامٌ
অর্থ: 'নেশাজাতীয় যেকোনো দ্রব্য মদ, আর যাবতীয় মদই হারাম।' (মুসলিম)
ধূমপান
মানুষের ক্ষতিকর বদঅভ্যাসগুলোর মধ্যে ধূমপান অন্যতম। হুক্কা, বিড়ি, চুরুট, সিগারেট ধূমপানের মধ্যে পড়ে। এতে যেমন শারীরিক ক্ষতি হয় তেমনি অর্থেরও অপচয় হয়। অপব্যয়কারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। অপব্যয়কারীকে আল্লাহ তায়ালা শয়তানের ভাই বলে আখ্যা দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন-
إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيْطِينِ
অর্থ: "নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীগণ শয়তানের ভাই।" (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৭)
আল্লাহ আরও বলেছেন, "নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা অপব্যয়কারীকে ভালোবাসেন না।” 'ধুম' কোনো খাবারের মধ্যে পড়ে না। এটি ক্ষুধা বা তৃষ্ণাও মেটায় না। এর দ্বারা কোনো উপকার হয় না বরং এটা মারাত্মক শারীরিক ক্ষতিসাধন করে এবং এর দ্বারা প্রচুর অর্থের অপচয় হয়। এ অপব্যয় মেটাতে ধূমপায়ীরা নিজেদের পরিবারে অর্থের সংকট ঘটায়। আত্মীয়স্বজনের সাথে অসদাচরণ করে। এ অপব্যয়ের অর্থ সংকুলানের জন্য নানা ধরনের অবৈধ পথে পা বাড়ায়। ফলে সামাজিক অনাচার সৃষ্টি হয়। সমাজে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়। ধূমপানের আর একটি ক্ষতির দিক হলো এটা খুব খারাপ গন্ধ ছড়ায়, যা অপরের জন্য ক্ষতিকর। এটা মানবাধিকারেরও পরিপন্থী।
আখলাক
মহানবি (স.) বলেছেন, 'মুখে দুর্গন্ধ নিয়ে যেন কেউ মসজিদে না যায়।' (নাসায়ি)
মুখে দুর্গন্ধ থাকলে মসজিদে অন্য নামাযির কষ্ট হয়। এমনিভাবে যানবাহনে ও সভা-সমিতিতে অন্য মানুষ ধূমপায়ীদের মাধ্যমে কষ্ট পায় যা ইসলামে অবৈধ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, 'ধুমপানে বিষপান।' কারণ এতে বিষ আছে। নিকোটিন জাতীয় বিষ যা ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে দেয়। ধূমপানের ফলে মানুষের শরীরে নানারকমের অসুবিধার সৃষ্টি হয়। যেমন: নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ব্রংকাইটিস, যক্ষ্মা, ফুসফুসের ক্যানসার, গ্যাস্ট্রিক, ক্ষুধামন্দা, হৃদরোগ প্রভৃতি। ধূমপান পরিবেশকে নষ্ট করে। ধুমপানের সংস্পর্শে যারা আসে- মহিলা, শিশু, অধুমপায়ী সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে দুটি সিগারেটে যে পরিমাণ নিকোটিন থাকে তা যদি কোনো মানুষের শরীরে ইনজেকশন দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তবে সে অবশ্যই মারা যাবে।
ধূমপানের ফলে ইবাদতেও বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। ধূমপায়ীর মুখের দুর্গন্ধে মুসল্লিদের ইবাদতেও বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।
মাদকাসক্তি
সাধারণত যে সকল খাদ্যবস্তু বা পানীয় মস্তিষ্কে বিকৃতি ঘটায়, জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ করে দেয়, দেহ ও মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, সেগুলো গ্রহণ করাকে মাদকাসক্তি বলে। মাদকাসক্তি একটি জঘন্য বদঅভ্যাস। এ সম্পর্কে হযরত উমর (রা.) বলেছেন-
'যা জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ করে দেয় তা মাদকদ্রব্য।' (বুখারি)
মহানবি (স.) আরও ঘোষণা করেন-
'যেই বস্তুর বেশি পরিমাণের মধ্যে মাদকাসক্তির কারণ রয়েছে, তার অল্প পরিমাণও হারাম।' (তিরমিযি)
নেশা সৃষ্টিকারী বস্তুগুলোর মধ্যে রয়েছে মদ, তাড়ি, আফিম, গাঁজা, ভাং, চরস, হাশিশ, মারিজুয়ানা, হেরোইন, মরফিন, কোকেন, প্যাথেড্রিন, সঞ্জীবনী সুরা, বিভিন্ন প্রকার অ্যালকোহল ইত্যাদি। ওষুধ হিসেবে এগুলোর কিছু কিছু ব্যবহার করা হয়। তবে নেশার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।
মহান আল্লাহ বলেছেন, "নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী, ভাগ্য নির্ণায়ক শর, ঘৃণ্য বস্তু শয়তানের কাজ। তোমরা এসব থেকে দূরে থাকো। আশা করা যায় তোমরা সফলতা লাভ করবে।" (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৯০)
মাদকদ্রব্যের কুফল মানবজীবনে মারাত্মক বিপজ্জনক। যদিও সাময়িকভাবে মাদক আনন্দ দেয় বা শক্তি দেয়। কিন্তু এর ক্ষতিকর দিক খুবই সুদূরবিস্তৃত ও সর্বগ্রাসী। এ নেশার ফলে ব্যক্তি চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মারামারি, হত্যাসহ নানাপ্রকার সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও মাদকাসক্ত ব্যক্তি অপুষ্টি, বুচিহীনতা, শারীরিক শীর্ণতা, লিভার ও কিডনি নষ্ট, ওজন কমে যাওয়া, শ্বাসনালির ক্ষতি প্রভৃতি সমস্যায়  ভোগে। কফ, কাশি, যক্ষ্মা ইত্যাদি রোগে দ্রুত আক্রান্ত হয়।
মাদকাসক্ত ব্যক্তি নামায, রোযা এবং যাবতীয় ইবাদতের ব্যাপারে উদাসীন থাকে। সে সবসময় অসুস্থ থাকে। মাদকের নেশা তাকে আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে রাখে, আর তাই সে পরকালে মহাশান্তি ভোগ করবে। মহানবি (স.) বলেছেন-
'মাদকাসক্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।' (দারিমি)
| কাজ: শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের বোর্ডে ধূমপানের অপকারিতাগুলোর একটি তালিকা তৈরি করবে। | 
Read more